Thursday, 26 July 2012

সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিএসএফ


জেলা প্রতিনিধি
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের বামনদল সীমান্তে গরু রাখাল আবু আলম (২৪) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সীমান্তবর্তী সানিয়াজান নদী থেকে আলমের লাশ উদ্ধার করে বিএসএফ সদস্যরা নিয়ে গেছে বলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা নিশ্চিত করেছে।

নিহত আলম পাটগ্রাম পৌরসভার কোটতলী রেলওয়ে কলোনি এলাকার মৃত সামসুল হকের ছেলে। তবে লাশটি আলমেরই কিনা তা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বুড়িমারী বিজিবি ও স্থানীয় সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, বুধবার গভীররাতে রাসেলের নেতৃত্বে আলমসহ বাংলাদেশি ১১ রাখালের একটি দল বামনদল সীমান্তের ৮৩৬ নম্বর মেইন পিলারের কাছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বিএসবাড়ী এলাকার সানিয়াজন নদী পার হয়ে গরু আনতে যান। ওই রাতে গরু নিয়ে দেশে ফেরার পথে রাখাল দলের ১০ জন বাংলাদেশে পার হয়ে আসতে পারলেও আলম ৩টি গরুসহ বিএসবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্পের টহলরত সদস্যদের হাতে আটক হন।

এরপর বিএসএফ সদস্যরা তাকে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে লাশ সানিয়াজান নদীর এক নম্বর বিএসবাড়ী বেইলি ব্রিজের ভাটিতে ভাসিয়ে দেয়।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় আলমের লাশ বামনদল সীমান্তের ৮৩৫ নন্বর মেইন পিলারের ৫ ও ৬ নম্বর সাব পিলার এলাকায় ভারতীয় কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের খড়খড়িয়া ১০৪ বিএসএফ ক্যাম্পের সামনে সানিয়াজান নদীতে ভেসে ওঠে। এ সময় বিএসএফ নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে বিজিবিকে জানালে এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী নিহত যুবকের প্রতিবেশী শরিফুল ইসলাম ও মামুন-অর-রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘বুড়িমারী বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা লাশ সনাক্ত করার জন্য আমাদের ২ জনকে খড়খড়িয়া ক্যাম্পের সামনে বিএসএফের কাছে পাঠায়। নিহতের মুখ-ম-ল হাতুড়ি দিয়ে এমনভাবে থেতলে ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া হয়েছে যে চেনার কোনো উপায় নেই। শরীর পানিতে থাকায় ফুলে গেছে। তবে দেহ দেখে মনে হয়েছে এটিই আলমের লাশ।’’

বিএসএফের নির্যাতনে নিহত আলমের ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মোহসেনা আক্তার সুমি বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘গরু পারপারকারী দলের নেতা রাসেল রাতে আমাকে বাড়িতে এসে বলেছেন আলমকে বিএসএফ আটক করেছে। নিহত ব্যক্তিই আমার স্বামী হবে। এ কথা বলে সুমি শুধুই বিলাপ করছিলেন।’’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত আলমের আর কেউ না থাকায় লাশ নিশ্চিতভাবে সনাক্ত করা যাচ্ছে না। এছাড়া সুমিরও কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় সুমি নিজেও কোথাও যেতে পারছেন না।

বৃহস্পতিবার বিকেলে লালমনিরহাট-৩১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের বুড়িমারী কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আল হেলাল ঘটনাস্থল থেকে বাংলানিউজকে জানান, লাশটি এখনো সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। লাশ সনাক্তের চেষ্টা চলছে। কোচবিহার-১০৪ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের চ্যাংরাবান্ধা কোম্পানী কমান্ডার বলবীর সিংহ পতাকা বৈঠকে জানিয়েছেন লাশটি ভারতীয় নাগরিকের নয়।

এদিকে, বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের বাদনদল ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে জানান, বুড়িমারী ইউনিয়নের কোনো ব্যক্তি নিহত বা নিখোঁজ হয়নি। এ লাশও এ এলাকার কারো নয়।

লালমনিরহাট-৩১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর রুহুল আমীন বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাস্থলে বিজিবির কোম্পানি কমান্ডারকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু লাশের কোনো দাবিদার না থাকায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। লাশের প্রকৃত দাবিদার পাওয়া গেলে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের কাছে লাশ ফেরত চাওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়:  ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১২ 

No comments:

Post a Comment