Wednesday 5 June 2013

‘বিএসএফকে সামলান’


সমীর পুরকায়স্থ, কলকাতা থেকে  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2013-06-05 12:23:37.0 GMT Updated: 2013-06-05 12:59:27.0 GMT

সীমান্তে জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলার জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কর্তৃত্ব কমিয়ে আনতে এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো দেশটির জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) কাছে আবেদন জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের একটি মানবাধিকার সংগঠন।

   
সর্বশেষ আবেদনে বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (এমএএসইউএম) বলেছে, বিএসএফ নির্যাতন ও ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে, প্রায়ই চোরাচালানের মিথ্যা অভিযোগে পড়তে হয় গ্রামবাসীকে।

গত মাসেও এক আবেদনে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বিএসএফ সদস্যদের অব্যাহত মানবাধিকার লংঘনের দিকে মানবাধিকার সুরক্ষায় দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের এই মানবাধিকার সংগঠন।

আগের আবেদনে মুর্শিদাবাদ জেলায় বিএসএফের মানবাধিকার লংঘনের একাধিক ঘটনাকে তুলে ধরা হয়। আর এবার সীমান্তবর্তী অন্যান্য জেলায় মানবাধিকার লংঘনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে।

এগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গরু চোরাচালানোর অভিযোগ এনে গ্রামবাসীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

“এটা একটা গুরুতর প্রবণতা এবং যত দ্রুত সম্ভব তা বন্ধ করা দরকার। নইলে সীমান্তবর্তী এলাকায় গণঅসন্তোষ তৈরি করতে পারে,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন এমএএসইউএম প্রধান কিরীটি রায়।

সীমান্তবর্তী গ্রামের অধিবাসীদের প্রায়ই অহেতুক নির্যাতনের শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে তিনি বলেন, “এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফ ও পুলিশ থেকে জনগণের জীবনের কোনো সুরক্ষা নেই।”

অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার একটি ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে মানবাধিকার সংস্থাটি।

তদন্তে দেখা যায়, গত ১৩ মার্চ ভোর ৫টার দিকে কালঞ্চী সীমান্ত চৌকির বিএসএফর একটি দল গোবরা গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক শাহাবুদ্দিন বিশ্বাসকে আটক করে।

“বিএসএফ সদস্য নূর আলম, বালা সাহেব, মনির আহমেদ ও আকবর খান তাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। শাহাবুদ্দিন বিএসএফ সদস্যদের কাছে তাকে মারধরের কারণ জিজ্ঞাসা করে। তখন তারা বলে যে, সে গরু চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। অভিযোগ অস্বীকার করে সে তাদের জানায় যে, ইটভাটায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে। কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা তার কথা না শুনে বেপরোয়াভাবে মারতে থাকে- সেই সঙ্গে চলতে থাকে গালি,” বলা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এরপর বিএসএফ সদস্যরা শাহাবুদ্দিনকে কালঞ্চী ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে একটি শৌচাগারের মধ্যে পিছন দিকে শিকল দিয়ে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়। তারপর মনির আহমেদ, নূর আলমসহ অন্য বিএসএফ সদস্যরা আবারো তার ওপর নির্যাতন করে।

“এরপর শাহাবুদ্দিনকে বিএসএফ’র গোবিন্দপুর সীমান্ত চৌকিতে আকবর খানের হেফাজতে দেয়া হয়, যেখানে খানের হাতে আবারো নির্যাতনের শিকার হন তিনি। বিকাল ৪টার দিকে তাকে সারাপুল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হাজির করা হয় এবং সেখান থেকে তার একটি চিকিৎসা সনদ সংগ্রহ করা হয়। অবশ্য সেখানে চিকিৎসকের কাছে নির্যাতনের তথ্য ফাঁস না করার জন্য শাহাবুদ্দিনকে আগেই শাসিয়ে রেখেছিল বিএসএফ সদস্যরা।”

তারপর কিছু প্রক্রিয়া শেষে বিকাল ৫টার দিকে শাহাবুদ্দিনকে স্বরূপনগর থানায় হস্তান্তর করে বিএসএফ। সন্ধ্যা ৭টার দিকে এলাকায় কয়েকজনকে সঙ্গে করে থানায় আসেন নির্যাতিতের ভাই। বজলুর রহমান নামের থানার সেকেন্ড অফিসারের (মেজবাবু) সঙ্গে দেখা করেন তারা। ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের কাছে ৫০ হাজার রূপি দাবি করেন শাহাবুদ্দিনকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। ওই অর্থ না দিলে তার জামিন হবে না এবং তিন বছর জেলের ঘানি টানতে হবে বলে তাদের ভয় দেখানো হয়।

জমি বন্ধক রেখে পুলিশ কর্মকর্তাকে ওই অর্থ দেয় শাহাবুদ্দিনের পরিবার, যেখানে একজন আইনজীবীকেও উপস্থিত রাখা হয়। এরপর ওই থানার ওসি রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরো তিন হাজার রূপি দিতে হয় তাদের। কাগজপত্র ঠিকঠাক করতে ওই অর্থ দাবি করেন তিনি।
এরপর একটি ফৌজদারি মামলা দেখিয়ে ১৪ মার্চ শাহাবুদ্দিনকে বশিরহাটের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করে পুলিশ। তখন থেকে ১৭ দিন কারাগারে কাটানোর পর জামিনে বেরিয়ে আসেন শাহাবুদ্দিন। এখনো তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন, যার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারকে।

গত ২০ মে বশিরহাটের উপ-বিভাগীয় পুলিশ কর্মকর্তার কাছে পুরো ঘটনা তুলে ধরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শাহাবুদ্দিন, যাতে বিএসএফ নির্যাতন থেকে শুরু করে স্বরূপনগর থানা পুলিশের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। তবে এখনো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

এমএএসইউএম প্রধান কিরীটি রায় বলেন, অনেক গ্রামবাসীই এভাবে নির্যাতনের শিকার হন। তারপর তাদের মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানো হয়। তাদের পরিবারকে পোহাতে হয় সীমাহীন কষ্ট।

“রক্ষকরাই ভক্ষক হয়ে উঠেছেন,” বলেন তিনি।

http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article633235.bdnews

No comments:

Post a Comment