Tuesday, 13 October 2009

পঞ্চগড়ে তিন বাংলাদেশিকে হত্যা : অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যের বিচার চলছে, দুই বাংলাদেশির সাক্ষ্য গ্রহণ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি | তারিখ: ১৩-১০-২০০৯


পঞ্চগড়ে ঢুকে তিন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত বিএসএফের সদস্য আর পি সিংয়ের বিচার চলছে ওই বাহিনীর নিজস্ব আইনে। ভারতের ফুলবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্পের আদালতে গতকাল সোমবার বাংলাদেশের দুজন চিকিত্সকের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সক বাহারাম আলী ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম গতকাল বিএসএফের আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাঁরা গতকাল সকালে বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ফুলবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্পে যান। এ দুই চিকিত্সক বিএসএফের সদস্য আর পি সিং ও অন্য আহতদের চিকিত্সাসেবা দিয়েছিলেন এবং নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত করেছিলেন।

পঞ্চগড় ২৫ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর এ টি এম মোজাফফর রহমান, একই ব্যাটালিয়নের ক্যাপ্টেন হাসিবুল হোসেন নবী ও তেঁতুলিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর আলম প্রধানও গতকাল ওই চিকিত্সকদের সঙ্গে ফুলবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্পে যান।

ফুলবাড়ী ক্যাম্প থেকে ফিরে দুপুরে মেজর মোজাফফর বাংলাবান্ধা জিরো লাইনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। আশা করছি আমরা ন্যায়বিচার পাব। আমরা বাংলাদেশি হতাহতের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়েছি।’ তিনি জানান, বিএসএফের একজন উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) নেতৃত্বে বিচার শুরু হয়েছে। এ আদালতে আরও আছেন তিনজন কমান্ড্যান্ট পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

এর আগে গত শনিবার তেঁতুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল লতিফ ফুলবাড়ী ক্যাম্পে গিয়ে আদালতে সাক্ষ্য দেন। তিনি ঘটনার দিন আর পি সিংকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

গত বছরের ১৬ নভেম্বর রাতে ভারতের নয়াবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্পের জওয়ান আর পি সিং মদ্যপ অবস্থায় বাংলাদেশে ঢুকে তেঁতুলিয়ার মাঝিপাড়া সীমান্তবর্তী ময়নাকুড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের ওপর অতর্কিত গুলিবর্ষণ করেন। এতে ঘটনাস্থলেই ওই গ্রামের শহীদুল ইসলামের স্ত্রী মাজেদা বেগম (২৫) এবং এক বছর বয়সী মামুন নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ শহীদুল ইসলাম (৩৮) ও গোলাম মোস্তফাকে (৫৫) তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে মোস্তফা মারা যান। গ্রামবাসী অস্ত্রসহ বিএসএফের সদস্য আরপি সিংকে আটক করে।

১৭ নভেম্বর সকালে মাঝিপাড়া সীমান্তে বিডিআর-বিএসএফের সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কিষানগঞ্জ বিএসএফের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আর চন্দ্র মোহন বিএসএফের গুলিতে তিন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান। এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। বিডিআর ১৭ নভেম্বর রাতে আর পি সিংকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে।

ওই রাতে বিএসএফ সদস্যের গুলিতে আহত হন এবং স্ত্রী ও পুত্র হারান ময়নাকুড়ি গ্রামের শহিদুল ইসলাম। গতকাল তিনি বলেন, ‘স্ত্রী-পুত্রকে হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই।’ দীর্ঘদিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়ে সুস্থ হলেও কাজ করতে পারছেন না বলে জানন তিনি।

নিহত মোস্তফার ছেলে শাকিল হোসেনও (২১) বাবা হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

No comments:

Post a Comment