Sunday 11 July 2010

দিনাজপুর সীমান্তে বিএসএফের ‘গুলিতে’ বাংলাদেশি নিহত


স্বজনের দাবি পিটিয়ে হত্যা, দেড় বছরে নিহত ১১


দিনাজপুর অফিস | তারিখ: ১১-০৭-২০১০

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ভাইগড় সীমান্তে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ‘গুলিতে’ এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। নিহত অকিম উদ্দিন (২০) একজন গরু ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। অকিমের এক স্বজন অভিযোগ করেছেন, বিএসএফ সদস্যরা অকিমকে রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে গুলি করা হয়।

এ নিয়ে গত দেড় বছরে দিনাজপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ১১ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে বলে বিডিআর সূত্রে জানা গেছে। অকিম জোতবানী ইউনিয়নের চকশুলবন গ্রামের মরহুম কাফাতুল্লার ছোট ছেলে।

বিডিআরের ভাইগড় বিওপির কোম্পানি কমান্ডার মো. আলী হোসেন বিএসএফের বরাত দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার রাত তিনটার দিকে সীমান্তের ২৯১ নম্বর মেইন পিলারের ১৩ নম্বর সাব-পিলার এলাকার ৩০০ গজ ভারতীয় সীমানায় এ ঘটনা ঘটে। ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে রাতে পালানোর সময় বিএসএফের ৫৭ ব্যাটালিয়নের ভীমপুর ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই অকিমের মৃত্যু হয় বলে বিএসএফ দাবি করেছে।

তবে নিহত অকিমের মামাতো ভাই স্থানীয় শৈলান গ্রামের মো. আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে জানান, অকিমসহ শৈলান গ্রামের পাঁচ ব্যবসায়ী সম্প্রতি গরু আনতে ভারতে যান। চার ব্যবসায়ী তাঁকে জানান, গরু কিনে বাংলাদেশে ফেরার সময় তাঁরা বিএসএফের সামনে পড়েন। চার ব্যবসায়ী দ্রুত সটকে নিরাপদ স্থানে আত্মগোপন করেন। হাতে গরুর রশি থাকায় অকিমের পালাতে দেরি হয়। পরে তিনি গরুর রশি ছেড়ে ভীমপুর ক্যাম্পের অধীন এলাকার এক বাড়িতে লুকিয়ে পড়েন। বিএসএফ সদস্যরা ওই বাড়ি থেকে তাঁকে বের করে রাইফেলের বাঁট দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই অকিমের মৃত্যু হয়। পরে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিএসএফ সদস্যরা অকিমের শরীরে গুলি করে হত্যা করেন। চার গরু ব্যবসায়ী পুরো ঘটনাটি দেখতে পান। পরে তাঁরা সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশে এসে ঘটনাটি জানান।
ভাইগড় ক্যাম্পের কমান্ডার মো. আলী হোসেন জানান, এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানানোর পর গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় পতাকা বৈঠকে বিডিআরের কাছে লাশ ফেরত দিয়েছেন বিএসএফ সদস্যরা। কিন্তু লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেননি তাঁরা।

পতাকা বৈঠকের পর সন্ধ্যায় অকিমের লাশ বিরামপুর থানার উপপরিদর্শক সাজুর কাছে সোপর্দ করা হয়। পরে জোতবানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আহাদ মণ্ডলের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন এসআই সাজুর বরাত দিয়ে জানান, নিহত অকিমের মাথার পেছনে ও পেটে দুটি বড় ক্ষতস্থান সেলাই করা আছে। এটা গুলির চিহ্ন, নাকি রাইফেলের বাঁটের আঘাত, তা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়। কারণ গুলি করা হলে তা শরীরের ভেতরে ঢুকে বের হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে বিডিআরের ফুলবাড়ী ৪০ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আকরামুজ্জামান ঘটনার জন্য প্রথম আলোর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত গত দুই বছরে যত বৈঠক হয়েছে, প্রতিটি বৈঠকেই লিখিত সিদ্ধান্ত হয়েছে, কোনো পক্ষই গুলি করে মানুষ হত্যা করবে না। কিন্তু সদর উপজেলার খানপুর থেকে হাকিমপুর উপজেলার ঘাসুরিয়া পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দিনাজপুর সীমান্তে বিএসএফের সদস্যরা গত দেড় বছরে অকিম উদ্দিনসহ ১১ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছেন।

No comments:

Post a Comment