Sunday 9 January 2011

কিশোরী হত্যার ৩০ ঘণ্টা পর লাশ হস্তান্তর :: বিএসএফের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ





সফি খান, কুড়িগ্রাম | তারিখ: ০৯-০১-২০১১



ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী (১৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে গতকাল শনিবার হাজার হাজার মানুষ সীমান্তে বিক্ষোভ করে। ৩০ ঘণ্টা পর গতকাল শনিবার বিএসএফ ফেলানীর লাশ ফেরত দিয়েছে। আইনি-প্রক্রিয়া শেষে আজ রোববার স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) ফুলবাড়ীর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবদুল জব্বার গতকাল প্রথম আলোকে জানান, পতাকা বৈঠকের পর বিএসএফ লাশ ফেরত দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও মানবতাবিরোধী। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।’

গতকাল ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে ফেলানীর লাশ দেখার জন্য তীব্র শীত উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ সেখানে সমবেত হয়েছে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে লাশ হস্তান্তরের সময় তাঁদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা সবাই বিএসএফের এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। কাশীপুর গ্রাম থেকে আসা মজিবর রহমান অভিযোগ করেন, সীমান্তে প্রায়ই বিএসএফ বিনা উসকানিতে গুলি করে মানুষ মারে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। সরকারের প্রতিবাদ করা উচিত। দক্ষিণ রামখানা গ্রামের কৃষক আ. হামিদ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘হামরা গরিব বলি তারা গুলি করি মারবে। প্যাটের ভোকোত মানুষ ভারত যায় কাজ করব্যার, তাই বলি মারি ফেলাবে বাহে। কোনো আইন নাই?’ অনন্তপুরের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হায়দার আলী বলে, ‘আমরা সবাই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
ফেলানীর বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা বানারভিটা গ্রামে শোকের মাতম চলছে। স্থানীয় মানুষজন এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

ফেলানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর বাবা নুরুল ইসলাম শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘বাবা গো তোমরা হামার বেটির লাশ আনি দেও, নিজ হাত মাটি দেমো। হামরা গরিব মানুষ প্যাটের ভোকোত ভারত গেছিলাম আর কোন দিন যাবার নই...’বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। নুরুল জানান, ফেলানীর মা ভারতে আছেন। তিনি জানেন না মেয়ে মারা গেছেন। ফুলবাড়ীর কুলাঘাট এলাকার এক ছেলের সঙ্গে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। শনিবার বিয়ের দিন ধার্য ছিল। তিনি মেয়ের বিয়ের জন্য ৩০ হাজার টাকা এবং কিছু গয়নাও ভারত থেকে এনেছিলেন। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিডিআর ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠকের পর দুপুর সোয়া ১২টায় লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ। পতাকা বৈঠকে বিডিআরের পক্ষে নায়েক সুবেদার আবদুল জব্বার এবং বিএসএফের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার রাম ব্রিজ রায় নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে বিডিআর এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। জবাবে বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে বলে জানায়। পরে বাংলাদেশের পক্ষে লাশ গ্রহণ করেন নায়েক সুবেদার আবদুল জব্বার। এ সময় নাগেশ্বরী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ছানাউল্ল্যাহ মিয়া ও ফুলবাড়ী থানার এসআই মো. নুরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
এসআই নুরুজ্জামান জানান, ফেলানীর লাশ থানায় রাখা হয়েছে। রোববার কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের পর লাশ স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করা হবে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার নুরুল ও ফেলানী ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে অনন্তপুর সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করেন। নুরুল প্রথমে মই বেয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে আসেন। ফেলানী মইয়ে উঠলে তার কাপড়চোপড় কাঁটাতারে আটকে যায়। এ সময় সে ভয়ে চিৎকার শুরু করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিএসএফের বুলেট তার বুক ঝাঁজরা করে দেয়।
নূরুলের পুরো পরিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন।

No comments:

Post a Comment