Monday, 17 January 2011

হত্যা বন্ধে বিএসএফকে রাবার বুলেট

Mon, Jan 17th, 2011 5:38 pm BdST


নয়াদিল্লি, জানুয়ারি ১৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- হত্যা বন্ধে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) প্রাণঘাতী নয়- এমন অস্ত্র (নন-লেথ্যাল উইপন) ও রাবার বুলেট দেবে সে দেশের সরকার।

বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশ সীমান্তে নিরীহ লোকজনকে হত্যা করছে- মানবাধিকার সংগঠনগুলোর এমন অভিযোগের পর এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

নয়াদিল্লিতে ভারত সরকারের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সীমান্তে মোতায়েন বিএসএফ সদস্যদের শিগগিরই 'নন-লেথ্যাল উইপন' দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তেও বিএসএফ এ ধরনের অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ করা হবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৪ হাজার ২৩ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৮৫৬ কিলোমিটারই ত্রিপুরার সঙ্গে।

ওই কর্মকর্তা জানান, প্রাণহানী না ঘটিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, চোরাকারবারী ও দু®কৃতিদের ঠেকাতেই এ পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে বিএসএফকে হেলিকপ্টারও সরবরাহ করা হবে।

গত ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানীর মৃত্যুর ঘটনার পর ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের সহিংসতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে।

রোববার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের এক সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, কুড়িগ্রামে বিএসএফের গুলিতে শিশু ফেলানীর হত্যার বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের শুরুতেই প্রতিবাদ জানানো হবে। আগামী ১৯ ও ২০ জানুয়ারি ঢাকায় এ বৈঠক হওয়ার কথা।

ওই বৈঠকের ঠিক আগেই বিএসএফকে 'নন-লেথ্যাল উইপন' সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিল নয়াদিল্লী।

ফেলানীর বাবা নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামের নুরুল ইসলাম নূরু গত ১০ বছর ধরে দিল্লিতে কাজ করেন। ফেলানী তার সঙ্গে সেখানেই থাকতো। দেশে বিয়ে ঠিক হওয়ায় সে বাবার সঙ্গে ফিরছিল।

সীমান্ত পার হওয়ার সময় কাঁটাতারের বেড়ায় কাপড় আটকে গেলে ফেলানী চিৎকার করে ওঠে। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে ও লাশ নিয়ে যায়। পরদিন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদস্যদের কাছে লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ।

এ ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠগুলো বিএসএফের তীব্র নিন্দা জানায়।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে অন্তত ৭৪ জন বাংলাদেশি নাগারিক নিহত ও ৭২ জন আহত হয়েছেন।

নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত মাসে "'ট্রিগার হ্যাপি': এক্সেসিভ ইউজ অব ফোর্স বাই ইন্ডিয়ান ট্রুপস্ অ্যাট দ্য বাংলাদেশ বর্ডার" শীর্ষক প্রতিবেদনে অভিযোগ করে, বিএসফ সদস্যরা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মানুষ হত্যা করেও পার পেয়ে যাচ্ছে।

হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনীর (বিএসএফ) বিচার হওয়া উচিৎ বলেও মন্তব্য করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

৮১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১০ বছরে কেবল পশ্চিমবঙ্গসংলগ্ন সীমান্তেই ৯০০ জনকে হত্যা করেছে বিএসএফ সদস্যরা। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২ হাজার ২১৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার।

এসব হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এর আগেও একাধিকবার আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর জানুয়ারিতে ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। ওই সফর শেষে যৌথ বিবৃতিতেও সীমান্তে অবৈধ কার্যক্রম ও প্রাণহানী ঠেকানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/জেবি/জেকে/১৭৪০ ঘ.

No comments:

Post a Comment