নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা ও পঞ্চগড় প্রতিনিধি | তারিখ: ১৯-০২-২০১০
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা গত বুধবার দিবাগত রাতে পঞ্চগড়ের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। পৃথক ঘটনায় সাতক্ষীরার এক রাখালের বাঁ হাতের কবজি কেটে নিয়েছে তারা। এর আগে গত মঙ্গলবার ভোরে স্পিডবোটের পাখা দিয়ে সাতক্ষীরার আরেক রাখালকে জখম করেছে বিএসএফ।
পঞ্চগড়ে নিহত ব্যক্তির নাম আনোয়ার হোসেন (৬০)। তাঁর বাড়ি সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের নরদেবপাড়া গ্রামে। কবজি হারানো গোলাম হোসেনের (৩৫) বাড়ি কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে। স্পিডবোটের আঘাতে আহত নূর ইসলাম (২৮) কালীগঞ্জের কাটুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পঞ্চগড় ২৫ রাইফেল ব্যাটালিয়ন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ার হোসেন বুধবার রাতে অজ্ঞাত কারণে অমরখানা সীমান্তে ভারতীয় এলাকায় যান। এ সময় ভারতীয় খালপাড়া ফাঁড়ির বিএসএফের সদস্যরা তাঁকে আটক করে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে বিএসএফের সদস্যরা আনোয়ারের লাশ সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে ভারতীয় অংশে ফেলে রাখে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে অমরখানা সীমান্তের ৭৪৪ নম্বর মেইন পিলার এলাকায় বিডিআর-বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা-বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএসএফের সদস্যরা আনোয়ারের লাশ বিডিআরের কাছে ফেরত দেয়। পরে বিডিআর আনোয়ারের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় সদর থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
নিহত আনোয়ার হোসেনের ভাতিজা অভিযোগ করেন, আনোয়ার মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তিনি ভুল করে ভারতীয় এলাকায় চলে গেলে বিএসএফের সদস্যরা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়।
বিডিআরের ভিতরগড় কোম্পানি সদরের কমান্ডার দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিএসএফ আনোয়ারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পঞ্চগড় ২৫ রাইফেল ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর এ কে এম হাসিবুল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আনোয়ারের শরীরে কোনো গুলির চিহ্ন নেই। তবে তাঁকে বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিকেরা পিটিয়ে হত্যা করতে পারে। কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না।
এদিকে গতকাল সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গেলে কবজি হারানো গোলাম হোসেন জানান, মঙ্গলবার তিনি এবং তাঁর গ্রামের পাঁচ ব্যক্তি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হঠাত্গঞ্জের হাটে গরু আনতে যান। বুধবার রাত তিনটার দিকে তাঁরা ছয়টি গরু নিয়ে হাকিমপুর বাজারের কাছে এলে হাকিমপুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের ধাওয়া করে। এ সময় অন্যরা পালিয়ে যেতে পারলেও তিনি ধরা পড়ে যান।
বিএসএফের সদস্যরা গোলাম হোসেনকে মারধর করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর বাঁ হাতের কবজি কেটে নেয়। পরে তাঁকে হাকিমপুর সীমান্তের সোনাই নদী দিয়ে বাংলাদেশে পার করে দেয়। এরপর লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
No comments:
Post a Comment