দিনাজপুর অফিস ও বিরামপুর সংবাদদাতা | তারিখ: ০৬-০৩-২০১২
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা সীমান্তে গত রোববার দিবাগত রাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) নির্যাতনে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন পাঁচজন।
এ নিয়ে গতকাল সোমবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। তবে বাংলাদেশিকে হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিএসএফ। তারা জানায়, অনুপ্রবেশের অভিযোগে গতকাল তারা এক বাংলাদেশিকে আটক করে ভারতের হিলি থানার পুলিশে সোপর্দ করেছে।
তবে গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি হিলি থানায় ফোন দিলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, বিএসএফ গত দু-তিন দিনে কোনো বাংলাদেশিকে তাঁদের কাছে সোপর্দ করেনি।
নিহত ব্যক্তি হিসেবে যার নাম পাওয়া গেছে তিনি হলেন বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের হরিহরপুর গ্রামের আবদুল জলিল (৪০)। তিনি পরিবার নিয়ে বিরামপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মামুদপুর মুন্সিপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকেন এবং ভারত থেকে গরু আনার কাজ করতেন।
কাটলার দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আলিম উদ্দিন ও মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বিরামপুরের বিভিন্ন এলাকার ৪০-৫০ জন লোক ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর জেলার হিলি থানাধীন জামালপুর গ্রামে গরু আনতে যান। এ সময় ২৫-৩০ জন বিএসএফ সদস্য তাঁদের ঘিরে ফেলে আক্রমণ চালায়। বাংলাদেশিরা পালানোর চেষ্টা করলে বিএসএফ তাঁদের ওপর কয়েকটি ককটেল ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে ছয় বাংলাদেশি আহত হন। এর মধ্যে আবদুল জলিল ও দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামের গোলাপ হোসেনকে আটক করে আরও নির্যাতন চালায় বিএসএফ। পরে রাতেই অন্য গরু ব্যবসায়ীরা গোলাপকে বিএসএফের হাত থেকে ছিনিয়ে দেশে নিয়ে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আহত ব্যক্তিদের শরীরের বিভিন্ন অংশে বিস্ফোরকের ক্ষত ছিল। গোলাপের মাথায় ছিল বেয়নেটের আঘাতের চিহ্ন। তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামের কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী বলেন, সকালে ভারতের জামালপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ীরা ছাগলডাঙ্গী এলাকার একটি সরিষাখেতে আবদুল জলিলের লাশ পড়ে থাকতে দেখে আমাদের খবর দেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই বিএসএফের একটি গাড়ি এসে ওই খেত থেকে জলিলের লাশ নিয়ে যায়।
দিনাজপুরে ৪০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তায়েফ-উল হক প্রথম আলোকে বলেন, ভারত সীমান্তে এক বাংলাদেশিকে হত্যা ও কয়েকজনকে আহত করার খবর পেয়ে গতকাল বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়। দুপুর ১২টার দিকে দক্ষিণ দাউদপুর সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএসএফের ক্যাম্প কমান্ডার মুকন্দর তালুকদার দাবি করেন, বিএসএফ ককটেল ছুড়ে বা নির্যাতন করে কোনো বাংলাদেশিকে হত্যা বা আহত করেনি। তবে একজন বাংলাদেশিকে আটক করে গতকাল তাঁরা ভারতের হিলি থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন।
গতকাল বিকেলে বিরামপুর পৌরসভার মামুদপুর মুন্সিপাড়া এলাকায় ‘নিহত’ জলিলের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাসা খালি। বাইরে তালা দেওয়া। প্রতিবেশী আইয়ুব আলী ও হামিদুল ইসলাম বলেন, স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে জলিলের স্ত্রী আজিমা বেগম তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সীমান্তে গেছেন।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-03-06/news/230229
No comments:
Post a Comment