পতাকা-বৈঠকের পর শান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি | তারিখ: ১৪-০৩-২০১০
সিলেটের পদুয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিএসএফ) ও বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদস্যরা পরিখা খনন করে মুখোমুখি অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। গতকাল শনিবার দুপুরে বিডিআর ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা-বৈঠকের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
২১ রাইফেল ব্যাটালিয়ন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং এলাকার পদুয়া সীমান্তে ১০ মার্চ আবদুল জলিল নামের পদুয়া এলাকার এক কৃষককে তাঁর কৃষি জমি থেকে বিএসএফ ধরে ওপারে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে পতাকা-বৈঠকের মাধ্যমে ওই বাংলাদেশিকে বিডিআর ফিরিয়ে আনে। গত বৃহস্পতিবার থেকে বিএসএফ এই সীমান্তের শূন্য রেখায় বিচরণ শুরু করে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে পদুয়ার পান্তুমাই বাঁশ বাগানের কাছে ১২৭০-৩ এস পিলারের আশপাশে বিএসএফ ২০ থেকে ২৫টি পরিখা খনন করে অবস্থান নেয়। বিএসএফের পরিখা পর্যবেক্ষণ করে বিডিআরও শুক্রবার রাতে সমসংখ্যক পরিখা খনন করে সতর্ক অবস্থান নেয়।
পদুয়ার পান্তুমাই গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওপারে বিএসএফ পরিখা খনন করে ভারী অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করে। প্রতিটি পরিখায় তিন থেকে চারজন করে বিএসএফ সদস্য অবস্থান নেন। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বিডিআর পরিখা খনন করে একইভাবে অবস্থান নিলে আশপাশের গ্রামে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের ফয়জুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, বিএসএফের পরিখা খনন দেখে রীতিমতো যুদ্ধের আতঙ্ক দেখা দেয়। বিডিআর সতর্কতার সঙ্গে শুক্রবার রাতেই পরিখা খনন শুরু করলে স্থানীয় লোকজন এতে সহযোগিতা করেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টান টান উত্তেজনা ছিল। দুপুর থেকে পতাকা-বৈঠক শুরু হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। দুপুর একটা ৩০ মিনিটে পতাকা-বৈঠক শুরু হয়। বিকেল সাড়ে তিনটায় তা শেষ হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২১ রাইফেল ব্যাটালিয়নের একজন কর্মকর্তা জানান, পদুয়া সীমান্তে জমি নিয়ে বিডিআর-বিএসএফের বিরোধ শুরু হলে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে দুই পক্ষের মধ্যে অধিনায়ক পর্যায়ে একাধিক পতাকা-বৈঠকের পর একটি সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তটি হচ্ছে, পদুয়ায় ১২৭০-৩ এস পিলারের কাছে একটি জিরো লাইন চিহ্নিত করে উভয় পক্ষ এর ২০০ গজ অভ্যন্তরে না ঢোকা। বিএসএফ এই নিয়ম লঙ্ঘন করে। গতকাল পতাকা-বৈঠকে ওই সিদ্ধান্তের কথা তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর বিএসএফ পরিখা থেকে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে।
পতাকা-বৈঠকে বিডিআরের পক্ষে নেতৃত্বদানকারী ২১ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার জহিরুল আলম প্রথম আলোকে জানান, পতাকা-বৈঠকে বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক শেখর গুপ্ত। তাঁকে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এতে তাঁরা পরিখা থেকে সরে যেতে সম্মত হন। জহিরুল আলম জানান, সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। বিকেল পাঁচটা থেকে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
No comments:
Post a Comment