দিনাজপুর অফিস ও হাকিমপুর প্রতিনিধি | তারিখ: ১৫-০২-২০১২
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) নির্যাতনে মিজানুর রহমান (২৮) নামের এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মিজানুরের বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামে। তিনি রিকশা চালানোর পাশাপাশি ভারত থেকে গরু আনার কাজ করতেন।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মিজানুরের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মো. খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিজানুরের ডান চোখ ছিল না। ডান চোয়াল, কান, দাঁতের মাড়ি ছিল মারাত্মকভাবে থেঁতলানো। চোয়ালের গভীর ক্ষত দিয়ে মাথার মগজ বেরিয়ে এসেছে।’
মিজানুরের কয়েকজন সঙ্গী ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে মিজানুরসহ আট-দশজন হাকিমপুর উপজেলার ঘাসুড়িয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকেন। রাত আনুমানিক তিনটার দিকে গরু নিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে ভারতের হিলি থানার আগ্রা মাহালি পাড়ার কাছে (সীমান্ত থেকে প্রায় এক হাজার গজ দূরত্ব) পৌঁছালে আগ্রা বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা মিজানুরকে আটক করেন। অন্যরা পালিয়ে যায়।
মিজানুরের সঙ্গীরা বলেন, গতকাল ভোরে তাঁরা আবার ভারতের ওই এলাকায় গিয়ে দেখেন, মিজানুর গুরুতর আহত। তাঁরা মিজানুরকে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক মিজানুরকে মৃত ঘোষণা করেন। সঙ্গীদের অভিযোগ, নির্মম নির্যাতন করার পর বিএসএফের সদস্যরা মিজানুরকে সীমান্তের কাছে ফেলে রাখেন।
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতাল থেকে মিজানুরের লাশ উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। ওই সময় তাঁর ডান চোখটি উপড়ানো এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
ওসি বলেন, স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, বিএসএফ সদস্যরা মিজানুরকে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করেন। নিহত মিজানুরের স্ত্রী ইসমত আরা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামী রিকশা চালানোর পাশাপাশি ভারত থেকে গরু আনার কাজ করতেন। গত সোমবার দুপুরে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি। স্বামীর সঙ্গীদের কাছে খবর পেয়ে গতকাল সকালে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন।
এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ফুলবাড়ী ৪০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তায়েফ উল হক বলেন, ঘটনাটি জয়পুরহাট জেলার বিজিবি-৩ ব্যাটালিয়নের সীমানায় ঘটেছে।
বিজিবি-৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএসএফের নির্যাতনে একজনের মারা যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
চার ঘণ্টা পর ফেরত: নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জানান, গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শিংনগর সীমান্তে ঘাস কাটতে যায় গ্রামের আবদুর রকিবের ছেলে বাবু (১১)। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যান।
বিজিবি শিংনগর ক্যাম্প কমান্ডার দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাবুকে ফেরত চেয়ে বিএসএফের কাছে চিঠি পাঠায় বিজিবি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেলা দুইটার দিকে সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বেলা তিনটার পর বাবুকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
No comments:
Post a Comment