কূটনৈতিক প্রতিবেদক | তারিখ: ২৪-০২-২০১২
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের হত্যাকাণ্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) মর্মাহত করেছে। তাই সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারতের কাছে উদ্বেগের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরবে ইইউ।
সফররত ইইউ সংসদীয় প্রতিনিধিদলের নেতা জিন ল্যামবার্ট গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। পাঁচ দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা নিয়ে নিজেদের অবস্থানের কথা খুব স্পষ্ট করেই তুলে ধরলেন ল্যামবার্ট।
ল্যামবার্ট জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত বুধবার সৌজন্য সাক্ষাতের সময় সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইইউ প্রতিনিধিদলের কথা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দুই নিকট প্রতিবেশীর চলমান কোনো সমস্যা নিয়ে এই প্রথমবারের মতো সোচ্চার হলো পাশ্চাত্যের কোনো জোট। অবশ্য সম্প্রতি ঢাকা সফরের সময় মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেক সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজ নেন। বিষয়টি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে কালো ছায়া ফেলেছে কি না, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি। বিশেষ করে বিএসএফের হাতে এক বাংলাদেশি তরুণের নির্যাতনের টিভি প্রতিবেদনের বিষয়টি তুলে ধরে এ সম্পর্কে জানতে চান ব্লেক।
জিন ল্যামবার্ট গতকাল সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার সময় দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক বিষয়গুলো উঠে আসে। এ সময় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেছেন।
বিএসএফের হাতে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা ও নির্যাতনকে কীভাবে দেখেন, এমন প্রশ্ন করা হলে ল্যামবার্ট বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। বাংলাদেশে আসার পর সীমান্ত হত্যা, কাঁটাতারের বেড়া সম্পর্কে যেসব তথ্য পেয়েছি, তাতে আমরা মর্মাহত। সীমান্ত নিয়ে আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি ভারতের কাছে তুলে ধরব।’
দুই প্রতিবেশীর দ্বিপক্ষীয় সমস্যার বিষয়টিতে কীভাবে উদ্বেগ জানানো হবে, জানতে চাইলে ল্যামবার্ট এ প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশ সফর শেষে ব্রাসেলস গিয়ে ইইউ পার্লামেন্টে যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে, তাতে বিষয়টি থাকবে। এ বিষয়টি ইইউ পার্লামেন্টে তোলা হবে। এ ছাড়া ব্রাসেলসে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে ইইউর পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা নিয়ে উদ্বেগ জানানো হবে। পরবর্তী ভারত সফরের সময় ইইউ সংসদীয় দল সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে তাদের উদ্বেগের কথা ভারত সরকারকে জানাবে।
ইইউ সংসদীয় দলের নেতা বলেন, ‘মানবাধিকারের প্রেক্ষাপট থেকে সীমান্তের বিষয়টি যদি দেখেন, তবে এটি একটি জঘন্য তৎপরতা। কারণ, কেউ যদি চোরাকারবারি হয়েও থাকে কিংবা কেউ যদি অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়, তবুও তার জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে না।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত, ভারতের কাছে বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা।
ল্যামবার্ট বলেন, পানিসম্পদ খাতে সহযোগিতার বিষয়টিও ইইউ আঞ্চলিকভাবে সমাধানের পক্ষপাতী। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় তাঁরা উল্লেখও করেছেন বলে জানান।
বাংলাদেশ সফরের সময় ইইউর সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।
No comments:
Post a Comment