Fri, Feb 24th, 2012 6:35 pm BdST
নয়া দিল্লি, ফেব্রুয়ারি ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ড অনেক কমেছে বলে দাবি করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম।
শুক্রবার নয়া দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তার এই বক্তব্য শুনে সীমান্তে হত্যা ‘শূন্যে’ নামিয়ে আনতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।
বৈঠকের পর দুই মন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে জানানো হয়, বাংলাদেশি এক যুবককে নির্যাতনের জন্য ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর আট সদস্যের বিচার সামরিক আদালতে হচ্ছে।
বাংলাদেশি যুবককে বিএসএফ সদস্যদের নির্যাতনের ভিডিওচিত্র গত মাসে প্রকাশের পর তা নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সমালোচনায় মুখর। ঢাকা সফরে আসা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধি দলও বৃহস্পতিবার জানান, ব্রাসেলসে ফিরে তারা বিষয়টি নিয়ে সেখানকার ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলবেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাহারা বলেন, “বিএসএফ সদস্যদের শক্তিপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে বলায় এবং সীমান্তে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ায় আমরা ভারত সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
একইসঙ্গে সীমান্তে গুলিবর্ষণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গত জুলাইয়ে দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার ফলপ্রসূ বাস্তবায়নের বিষয়টিই শুক্রবার দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে মূল আলোচ্য ছিল।
সা¤প্রতিক মাসগুলোতে সীমান্তে বিএসএফের গুলিবর্ষণের ঘটনা নিয়ে সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন চিদাম্বরম।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চিদাম্বরম বলেন, সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর প্রতি নয়া দিল্লির শক্তিপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকার নির্দেশের পর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ সদস্যদের গুলির ঘটনা ‘অনেক কমেছে’।
চিদাম্বরাম বলেন, গত আট মাসে এ ধরনের মাত্র তিনটি ঘটনা ঘটেছে-নভেম্বরে একটি এবং ডিসেম্বরে দুটি। এ তিনটি ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
“সীমান্তে যে কোনো ধরনের প্রাণহানির জন্য আমরা দুঃখিত। তবে গত আট মাসে এ তিনটি ঘটনায়ই হামলা থেকে সহকর্মীদের বাঁচাতে গুলি করা ছাড়া বিএসএফ সদস্যদের আর কোনো উপায় ছিল না,” বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সীমান্তে বিএসএফ সদস্যদের গুলি চালানোর ঘটনা কমিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাবে নয়া দিল্লি।
গত জুলাইয়ে করা চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তে বিএসএফ ও বিজিবির যৌথ টহল শুরু করার জন্য এদিন দুই দেশের সীমান্তের ২৩টি চৌকি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়। ওই চুক্তি হওয়ার পর এটাই তাদের প্রথম বৈঠক।
ভারত-বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর বিএসএফ প্রধান ইউ কে বনসাল সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশি নাগরিককে নির্যাতনের ভিডিওচিত্রে বিএসএফ’র যে আট সদস্যকে দেখা গেছে তারা বিভাগীয় তদন্তে প্রাথমিকভাবে দোষী প্রমাণিত হয়েছে। এখন সামরিক আদালতে তাদের বিচার হবে।
নয়াদিল্লি সীমান্তে হত্যা বন্ধে বারবার আশ্বাস দিয়ে এলেও সীমান্তে গুলি চলবে বলে মন্তব্য করে বিএসএফ প্রধান সপ্তাহ খানেক আগেই বাংলাদেশে বিভিন্ন মহলের সমালোচনায় পড়েন।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সীমান্তে (বিশেষত রাতে) বাংলাদেশি নাগরিকদের চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপে ঢাকার প্রতি নয়া দিল্লির পক্ষ থেকে বৈঠকে আহ্বান জানানো হয়।
সীমান্তে বিএসএফ সদস্যরা শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার নীতি গ্রহণের পর সা¤প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের সীমান্তে অপরাধ এবং বিএসএফ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে বলে বৈঠকে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন।
বৈঠকে দুই দেশের সীমান্তে অবৈধ কর্মকাণ্ড ও অপরাধ কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার জন্য সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় দ্বিপক্ষীয় দায়িত্বের ওপর জোর দেওয়া হয় বলে জানান তারা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এএইচ/এমআই/২০২০ ঘ.
No comments:
Post a Comment